রোগ প্রতিরোধকারী খাবারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
দৈনন্দিন আমরা যেসব খাবার খাই, তাতে থাকে শর্করা, আমিষ, তেল, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। শর্করা, আমিষ, তেল এগুলো খাদ্যনালিতে হজম হয় এবং তা থেকে আমরা ক্যালরি বা শক্তি এবং পুষ্টি পাই। ভিটামিন ও খনিজ লবণও আমাদের পুষ্টি দেয়, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খাবারে এসব উপাদানের সঙ্গে আরও থাকে খাদ্য-আঁশ।
খাদ্য-আঁশ শরীরে হজম হয় না। খাদ্যনালি থেকে শোষণ হয়ে রক্তে যায় না। এগুলো মোটামুটি অবিকৃত অবস্থায় পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র হয়ে পায়ুপথ দিয়ে বের হয়ে যায়। হজম হয় না বলে খাদ্য-আঁশ থেকে আমরা ক্যালরি বা শক্তি পাই না। ক্যালরি পাই না বলেই যে খাদ্য-আঁশ অপ্রয়োজনীয়, তা কিন্তু নয়। বরং এগুলো শরীর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ।
উদ্ভিদ থেকে আমরা যেসব খাবার পাই, সেগুলোতে আছে খাদ্য-আঁশ। প্রাণিজ খাবারে খাদ্য-আঁশ নেই। ফলমূল, শাকসবজি, দানাশস্য, বিচি, বাদাম, ডাল এগুলোতে আছে খাদ্য-আঁশ। খাদ্য-আঁশ আবার দুই ধরনের: কোনো কোনোটি পানিতে ভ্রবণীয় এবং কোনো কোনোটি পানিতে অদ্রবণীয়।
পানিতে দ্রবণীয় খাদ্য-আঁশ খাদ্যনালির ভেতর পানিতে গলে গিয়ে জেল-এর মতো বস্ত তৈরি করে। এগুলো খাদ্যনালি থেকে শর্করা ও তেল-চর্বির শোষণ কমিয়ে দেয়। এবং এভাবে রক্তের কোলেস্টেরল ও চিনির মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। তাই এ ধরনের খাদ্য- আঁশ হুদেরাগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। আপেল, পেয়ারা, টক ফল, কমলালেবু, ডাল এসবের আঁশ পানিতে দ্রবণীয়।
পানিতে অদ্রবণীয় খাদ্য-আঁশ খাদ্যনালিতে পানি শোষণ করে ধরে রাখে। এগুলো মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। মল নরম করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। মল ত্যাগ করা সহজতর করে।
মল ত্যাগের অভ্যাস নিয়মিত করে। অর্শ রোগ ও মলাশয়ের ডাইভারটিকুলাইটিস রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হলে হার্নিয়া হতে পারে। সুতরাং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এসব খাদ্য-আঁশ হার্নিয়া প্রতিরোধেও সহায়তা করে। গমের আটা, গমের বাদামি আবরণ, চালের বাদামি আবরণ, বাদাম, শাকসবজি এসবের আঁশ পানিতে অদ্রবণীয়।
খাদ্য আঁশ শরীরের ওজন কমাতেও সহায়ক। খাদ্য-আঁশ থেকে কোনো ক্যালরি পাওয়া যায় না। তবে খাদ্য-আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে হয় একটু বেশিক্ষণ চিবিয়ে। তাই পেট ভরার আগেই ক্ষুধা মিটে যায়। খাদ্য-আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেলে পেট বেশিক্ষণ ভরা ভরা লাগে। তাই ক্যালরিযুক্ত খাবার কম খাওয়া হয়। ফলে শরীরের ওজন বেশি বেড়ে যায় না। মোটা মানুষের ওজন কমেও এভাবে।
কতটুকু খাদ্য-আঁশ প্রয়োজন? মোটামুটি হিসাবে, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২০ থেকে ৩০ গ্রাম খাদ্য-আঁশ প্রয়োজন। শিশুদের ক্ষেত্রে হিসাবটা এরূপ: শিশুর বয়সের সঙ্গে পাঁচ যোগ করলে যত হয়, দৈনিক তত গ্রাম।
তবে সব সময় এরূপ হিসাব করে খাদ্য-আঁশ খাওয়া যাবে না। তাই শরীরের প্রয়োজন মেটাতে খাদ্য-আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে বেশি বেশি। প্রতিদিনই বেশি বেশি শাকসবজি, ফল, ডাল এগুলো খেতে হবে। ময়দার রুটির পরিবর্তে গমের আটার রুটি আর বেশি ছাঁটাই করা পরিষ্কার চালের পরিবর্তে কম ছাঁটা বাদামি চালের ভাত খেলে খাদ্য-আঁশ পাওয়া যাবে বেশি।
উৎস ও ব্যবহারঃ-
স্বাস্থ্য বিষয়ক এই লিখাটি ইন্টারনেট ও বিভিন্ন বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করে লিখা হয়েছে। এই লিখাটি সবার জন্যে উন্মুক্ত। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া যে কেউ এই লিখাটি ব্যবহার করতে পারবেন।